ঝুঁকি নিয়েও দেশের প্রয়োজনে কাজ করছে দেশবন্ধু গ্রুপ
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
Published : Wednesday, 10 June, 2020
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) একটি মহামারি। এ ভাইরাসের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফিরতে একটু সময় লাগবে। এখন সবার চিন্তা করতে হবে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে তাদের কীভাবে খাইয়ে-পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখা যায়। এ চিন্তা থেকেই অন্যান্য সময়ের মতো বর্তমানে মহামারিতেও এগিয়ে এসেছে দেশ ও জনগণের বন্ধু দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু গ্রুপ।
জাতি ও দেশ গঠনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ দেশবন্ধু গ্রুপ। এ অঙ্গীকার পূরণে দেশের দুর্যোগময় সংকটে প্রাণহানির ঝুঁকি জেনেও দেশের খাদ্যের জোগান স্বাভাবিক রাখতে খাদ্যজাত পণ্য উৎপাদন, এমনকি গ্রুপের সব কারখানায় সরকারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি শতভাগ মেনে উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে দেশবন্ধু গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো। একইসঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিক-কর্মচারীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা। সব পর্যায়ের কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করছেন।
দেশের মানুষের জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে কুড়িগ্রামে সাহেরা-ওয়াসেক অটো রাইস মিলস চলছে। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে প্রতিষ্ঠিত সাহেরা-ওয়াসেক হাসপাতালের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজারো মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া দেশবন্ধু গ্রুপের ২৭টি কোম্পানির মধ্যে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে ডেনিম উৎপাদনে এককভাবে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস চলছে পুরোদমে। একইসঙ্গে সাইউথইস্ট সোয়েটারও পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানি করছে। চিনিশিল্প, সিমেন্টশিল্প, সার ব্যবসা, শপিংমল, শিপিং, টেক্সটাইল মিলস, তৈরি পোশাক কারখানা, পলিমার, প্যাকেজিং, কনজ্যুমার অ্যান্ড এগ্রো প্রডাক্টস, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, পাওয়ার প্লান্ট, আবাসন ও লজিস্টিকসহ, চালকল, মিডিয়াসহ গ্রুপটির সব কারখানা ও প্রতিষ্ঠান বর্তমানে চালু রয়েছে।
শুধু তাই নয়, সংকটকালেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করেছে দেশবন্ধু গ্রুপ। এর মধ্যে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস, দেশবন্ধু সুগার মিলস ও দেশবন্ধু ফুড অ্যান্ড বেভারেজের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এতে নিয়মিত খরচ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সব কর্মীকে শতভাগ বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে দেশবন্ধু গ্রুপ।
দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা নিজেই সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা। তিনি বলেন, বিশ^ব্যাপী মহামারি বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে যার রূপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাই লাভ-লোকসানের হিসাব কষে নয়, মানুষের পাশে দাঁড়াতেই ঝুঁকি জেনেও খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করছে দেশবন্ধু গ্রুপ। দেশ গঠনে দেশবন্ধু গ্রুপের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
গোলাম মোস্তফা বলেন, করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) একটি মহামারি। যে কোনো মহামারি দূর হওয়ার জন্য দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে। মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে তিন-চার-পাঁচ বছর লেগে যেতে পারে। তবে প্রতিকূলতা থাকলেও দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে, জীবিকার প্রয়োজনে উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম চালু রাখতে হবে।
তাই কী করে বা কত শিগগিরই স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে পারি এবং স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফিরে যেতে পারব সেদিকে নজর দিতে হবে। এখন যেসব মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ও যারা (নিম্নআয়ের জনগণ) দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে তাদের কীভাবে এ সংকটকালীন বাঁচিয়ে রাখা যাবে সেদিকেই সবাইকে নজর দিতে হবে।
শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্বেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। সেটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ব্যবসা বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, বিনিয়োগ ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই আমরা এর নৈতিবাচক প্রভাব লক্ষ করছি। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়, বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা- বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রত্যেকেই বিভিন্ন ধরনের হিসাব করে দেখেছে যে, প্রত্যেকটি দেশই অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হবে। ফলে ২০২০ অর্থবছরে এবং সামনের অর্থবছরগুলোতেও তাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার অনেক কমে যাবে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আইএমএফ হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার কমে দুই শতাংশ হবে। তবে আগামী অর্থবছরে আইএমএফের হিসাব মতে এ প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে। সেজন্য দেশের সব ব্যবসায়ীর এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থাৎ একেবারে বসে না থেকে সবাইকে কিছু না কিছু করতে হবে। দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশবন্ধু গ্রুপের সব কারখানা চলমান রয়েছে; যা আমাদের দেশের খাদ্য সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখছে এবং রপ্তানি খাতও সচল রাখছে। এতে দেশের অর্থনীতির চাকাও সচল থাকবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, অচিরেই দেশেও ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ভালো হবে।
আজকালের খবর/এএসএস