Published : Friday, 29 May, 2020
কোভিড-১৯ আসার পাঁচ মাস হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স এবং চীনের কোনো বিজ্ঞানী নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি এটা কীভাবে ছড়ায়। প্রথমে বলা হলো- শিশুদের আক্রান্তের সংখ্যা নেই বললেই চলে। কিন্তু পরে তা থেকে সরে আসলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারপরে বলা হলো-যুবকদের মৃত্যুর হার খুবই কম। কিন্তু পরে তা থেকেও সরে এলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বলা হচ্ছিল ছয় মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন আসবে।
কিন্তু এখনো ভ্যাকসিনের গবেষণা সে পর্যায়ে পৌঁঁছেনি। এখন বলা হচ্ছে আরও ছয় মাস লাগবে। আর ছয় মাসের পর আরও ছয় মাসের কথা বলা হবে কিনা, কে জানে। যেভাবে সব দেশ আক্রান্তের মধ্যেই সবকিছু খুলে দিচ্ছে, তাতে আরও বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে কিনা, সেটাও বলা যাচ্ছে না। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও বড় ধরনের আক্রমণের ইঙ্গিত দিয়ে আসছে।
কেউ কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করছেন। একশরও বেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য কাজ করছে। কেউ কেউ তৃতীয় ধাপ পর্যন্ত সফলতা পেয়েছে, কেউ কেউ ব্যর্থ হয়েছে। নতুন করে অনেকেই গবেষণায় নেমেছে। তবে সেভাবে আশার খবর আসছে না। বলা হচ্ছে, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন আসলেও আরও ১১-১২ মাস সময় লেগে যেতে পারে।
কারণ একটি ভ্যাকসিন তৈরির ১০টি ধাপ রয়েছে। তা হলো- ১. গবেষণা, ২. ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, ৩. অল্প কিছু মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে পরীক্ষা, ৪. কয়েকশ মানুষের শরীরে প্রয়োগ, ৫. হাজার মানুষের শরীরে প্রয়োগ, ৬. ডেডিকেটেড কারখানা তৈরি, ৭. ম্যানুফ্যাকচারিং, ৮. যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদন, ৯. ডিস্ট্রিবিউশন ও ১০. মানুষের শরীরে প্রয়োগ।
করোনা ভ্যাকসিন তৈরিতে বিশ্ব এখন তৃতীয় ধাপে আছে। পঞ্চম ধাপ হয়ে গেলে বাকিগুলো প্রায় প্রস্তুত। তাই আশা করা হচ্ছে ১৮ মাসের মধ্যেই আমরা এই ভ্যাকসিন পাবো। তবে বিশ্বের প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের ভ্যাকসিন তৈরি করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আরেকটি বিষয় হলো ভ্যাকসিন আবিষ্কারের বিভিন্ন দেশের সরকারি উদ্যোগ একেবারেই কম। যা করা হচ্ছে, তা বেসরকারিভাবেই করা হচ্ছে। করোনায় প্রায় সাড়ে তিন লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। প্রতিদিনই মানুষ মরছে। ৫৭ লাখেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে।
তাহলে ভ্যাকসিন আসার আগে বিশ্ব চলবে কীভাবে বা এর শেষ কোথায়? আর বিশ্ব অর্থনীতি যেভাবে ধসে পড়েছে তারই-বা শেষ কোথায়। কারণ বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাণ ধরা হয় ৭২ ট্রিলিয়ন ডলার। আর সেই হিসেবে প্রায় ৯ ট্রিলিয়ন ডলার কমে গেছে, যা ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। কিছু কিছু শিল্প করোনা-পরবর্তী সময় আগের অবস্থায় ফিরবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোটি মানুষের কর্মসংস্থান একেবারে হারিয়ে যাবে, যা কখনো ফিরবে না। সেবা ও রিটেইল শিল্পে বড় ধরনের আঘাত এসেছে। ট্যুরিজম ও হোটেল শিল্পে ইতোমধ্যেই ভয়াবহ ধস নেমে এসেছে। এসব খাতে উন্নতি হবে, কিন্তু আর কখনো আগের মতো হবে না।
মানুষের চলাচল কমে যাওয়া এবং অধিকাংশ শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় পরিবেশগতভাবে কিছুটা লাভ হয়েছে। পৃথিবীর বাতাসে দূষিত কণার উপস্থিতি কমেছে। ওজোনস্তর হালকা হয়েছে। তবে সবকিছুই তো মানুষের জন্য। তাই মানুষের বেঁচে থাকাটাই বড় বিষয়। মানুষের প্রতিদিনের আয় কমেছে। বাসা ভাড়া না দিতে পেরে অনেককেই শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে হবে। বিশ্বের কিছু মানুষ বাস্তুহারা হতে পারে। বেকারের সংখ্যা সব দেশেই অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। খোদ আমেরিকাতেই ২০ শতাংশ মানুষ বেকার হয়েছে। তবে আমেরিকা তাদের প্রতি সপ্তাহেই আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। বিশ্বের কয়েকটি উন্নত দেশ ছাড়া, আর কারই এ ধরনের নিয়মিত সহায়তা প্রদানের সক্ষমতা নেই। তাই বেকার মানুষদের জীবনের ভবিষ্যৎ আয় নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। মানুষ বাসাবাড়িতে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। বিশ্বের প্রায় ৮০০ কোটি মানুষ তিন ফুট বা ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করবে, তা হয় না। মানুষের শরীরের সঙ্গে শরীর লাগবে না, তা তো হবে না। ঢাকার গুলিস্তান, ফার্মগেট থেকে শুরু করে নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় মানুষ চলাচল করলে এখনকার সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা তেমন সহজ হবে না।
চীনের উহান থেকে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি হওয়ার শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে আসছে এটা প্রাণীর শরীর থেকে এসেছে। মানুষের তৈরি নয়। চীনও বারবার বলছে, এটা তাদের কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে ছড়ায়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা মানতে নারাজ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাকে চীনা ভাইরাস এবং চীনের তৈরি বলে অভিযোগ করে আসছেন। আর তারপরেই শুরু হয়েছে করোনা নিয়ে কন্সপারেন্সি থিউরি বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট ও টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলো ট্রাম্পের এই অভিযোগকে আরও জোরালো করে তুলেছে।
করোনা ভাইরাস চীনের তৈরি বলে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তা প্রচার করছে। আর মানুষও করোনা নিয়ে খুবই বিরক্ত। কারণ মানুষ ভয়াবহ সংকটের মধ্যে পড়েছে। কাজ নেই, স্বাভাবিক জীবন নেই, জীবনের অনুষঙ্গগুলো হারিয়ে গেছে। তাই এখন বা পরে যদি প্রমাণ হয় যে, বিশ্বের কোনো দেশ এই ভাইরাস ছড়িয়েছে, তাহলে বিশ্ব সেই দেশের বিরুদ্ধে এক হয়ে যাবে।
এক্ষেত্রে একটা বিষয় হলো বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের সুপার পাওয়ার হয়ে ওঠা। এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হলো চীন। যুক্তরাষ্ট্র চায় না, চীন বা কেউ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠুক। বেশ কিছুদিন থেকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মৃদু বাণিজ্যযুদ্ধ চলমান। তার মধ্যে ঘি দিয়েছে চীনের উহান থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস। এই সুযোগে চীনকে দমিয়ে দেওয়া। আর এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে যেকোনো ধরনের সংঘাতে যেতে পারে।
এদিকে, ইউরোপ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ইউরোপ মনে করছে ট্রাম্প চীনকে দমাতে করোনাকে চীনের ভাইরাস বলছে। তবে যদি প্রমাণ হয় যে, চীন এই ভাইরাস ছড়িয়েছে, তাহলে ইউরোপও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যাবে। তখন চীন বড় ধরনের বেকায়দায় পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান বিশ্বে এক নম্বরের রাখার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে আসছে এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। যেমন বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘসহ বিশ্বের সব শক্তিশালী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া বিশ্ব মিডিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য অনেক ভালো। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি গণমাধ্যমের মালিক যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের বিখ্যাত সিনেমা বানায় যুক্তরাষ্ট্রের হলিউড। আর বিশ্ববিখ্যাত অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমেরিকায় রয়েছে, যা চীনের নেই।
অপরদিকে, চীন শুধু টাকা আয় করেছে। চীন সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে টাকা আয় করতে চায়। তারা দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনায় নেই। বিশ্বে ব্যবসা করে তারা অনেক টাকার মালিক। কিন্তু বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে এরকম কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা গড়তে পারেনি। চীন ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড করছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা পর্যবেক্ষণ করছে। চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্র অন্যকিছু করে ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্র যা করে তা মানুষ শুরুতে জানতে পারে না।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার তার অন্যতম মিত্র হিসেবে ভারতের সঙ্গে এখন কাজ করছে। চীনকে ঘায়েল করতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ব্যবহার করতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো ধরনের যুদ্ধ লেগে গেলে তার খেসারত বিশ্বের অধিকাংশ দেশকে দিতে হবে। কারণ এর প্রভাব সবার উপরেই পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, জাপানের মতো দেশ করোনার কারণে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের কর্মসংস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছে। আমাদের এখন নজর দিতে হবে বিনিয়োগের দিকে।
কারণ চীন থেকে বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলো তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নিতে শুরু করেছে এবং নেবে। এই সুযোগে বিনিয়োগ টানতে হবে। আমাদের কর্মী আছে এবং তাদের অল্প টাকায় কাজে লাগানো যায়। যা বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনক। বাংলাদেশে চীনের অধিকাংশ বিনিয়োগ অবকাঠামো খাতে। আর অন্যখাতে তেমন কোনো বিনিয়োগ নেই।
করোনার ছয় মাস হয়ে গেলো। এখনই আমাদের ১০ বছরের জন্য গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। সেটা হবে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে এবং দেশের শিল্প-কারখানার উৎপাদন ধরে রাখতে। একইসঙ্গে রপ্তানি অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে হবে। আমাদের প্রবাসীরা অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। ফলে রেমিট্যান্স আসা কমে গেছে। আগামীদিনে আরও কমতে পারে।
বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ ভালো না। সূচকে ১৯০ এর মধ্যে ১৭০ এ বাংলাদেশের অবস্থান (তথ্যসূত্র: বিশ্বব্যাংক)। সিঙ্গাপুর বা এ রকম কয়েকটি দেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, এক থেকে সাত দিনের মধ্যে একটি কোম্পানি গঠন করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এই কাজটি করতে তিন মাস সময় লাগে। এটা কমিয়ে আনতে হবে। এই কাজগুলো দ্রুত করার বিষয়ে গাইডলাইনে নির্দেশনা থাকবে। কোম্পানি গঠন করার জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা যেতে পারে।
রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) বাদে অন্য কোথাও বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগ করলে তাতে বাংলাদেশি কোম্পানির অংশীদারিত্ব থাকতে হবে। বিনিয়োগ খাতে ট্যাক্স, জমির মালিকানা জটিলতা (Bankable) নিরসন করতে হবে। বাংলাদেশে জমির মালিকানা ছাড়া ব্যাংক কোনো প্রকল্প ঋণ দেয় না। এ ছাড়া ইলেক্ট্রনিক্স, মোবাইল ফোন ও ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
করোনা বিশ্বের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশার চিত্র। এই খাতে আমাদের দক্ষ জনবল তৈরি করার কোনো বিকল্প নেই। আমরা প্রচুর নার্স তৈরি করতে পারি। আমাদের জনবলকে নার্সিং প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষ কর্মী হিসেবে বিদেশে পাঠাতে পারি। নার্স পাঠাতে পারলে আমাদের গার্মেন্ট ও প্রবাসী আয় যে কমেছে সেটার ধকল আমরা কিছুটা হলেও সামলাতে পারবো।
সরকার যে এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা দিচ্ছে। তার জন্য আমাদের নির্দিষ্ট কোনো গাইডলাইন নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু নির্দেশনা জারি করেছে, কিন্তু সেই নির্দেশনা কেউ মানছে কিনা, সেটার খবর নেওয়া হয় না। সরকারকে এসব বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
আমাদের ব্যবসা বাড়াতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। আর দীর্ঘদিন থেকে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর করার যে পরিকল্পনা ঝুলে আছে, তা এখন বাস্তবায়নের সময় এসেছে।
আরেকটি বিষয় হলো আমলানির্ভরতা। এখান থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। জেলা প্রশাসককে সামনে দিয়ে মন্ত্রী বা এমপিকে সাইড করে দিলে ফল ভালো হবে না। দিনশেষে জনগণের প্রতিনিধিরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। আমলারা নন। রাজনৈতিক নেতারাই দেশ চালাবেন এবং তারাই সিদ্ধান্ত দেবেন।
আর সরকার শুধু বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। কিন্তু এখন সময় এসেছে শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর। সারা বিশ্বে অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয় দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিয়ে। তাই বাংলাদেশ সরকারও অবকাঠামো খাতে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কম সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিয়ে বহুমুখী প্রকল্পগুলো করার চেষ্টা করতে হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এসব প্রকল্প করলে শিল্প বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। যেহেতু বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হলো বেকারত্ব। আর এই বেকারত্ব সমস্যার সমাধান একমাত্র শিল্পায়নের মাধ্যমেই করা সম্ভব।
এ ছাড়া আমরা আরেকটি কাজ করতে পারি। সেটা হলো-বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে যে টোল কালেকশন হয় তা একটি পাবলিক লিমিটেড করা যেতে পারে। এ রকম বাংলাদেশ বিমান, রেলওয়ে, ডাক বিভাগ ও চট্টগ্রাম বন্দরসহ অন্যান্য পাবিলক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে লিমিটেড কোম্পানি করা যেতে পরে। অর্থাৎ যেসব প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত আয় আছে।
আর এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা হংকং শেয়ারবাজার, যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার, সিঙ্গাপুর শেয়ারবাজারসহ বিশ্বের বড় বড় শেয়ারবাজারে নিয়ে যেতে পারি। সেখানে মানুষ মার্কিন ডলার দিয়ে শেয়ার কিনবে, আমাদের ডলার আসবে। আমাদের টাকাটা ডলারে আসলো। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনকে আমারা বেসরকারিখাতে ছেড়ে দিতে পারি। সেটাও আমরা বড় বড় শেয়ারবাজার বাজারে শেয়ার ছাড়তে পারি। সোনালী ব্যাংকের ৩০ ভাগ শেয়ার সরকার বাজারে ছাড়তে পারে।
এ বিষয় নিয়ে এখনই আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। আর এসব কিছুই করতে হলে জীবন ও জীবিকা অঙ্গা-অঙ্গিভাবে সচল রাখা জরুরি। যার উদ্যোগ ইতোমধ্যেই নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ৩১ মে থেকে জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক করার । নিঃসন্দেহে সাহসী পদক্ষেপ। তারপরেও জীবন যেমন জীবিকা ছাড়া চলতে পারে না, তেমনি জীবন ছাড়াও জীবিকার অস্তিত্ব নেই। তাই এদুটোকে একসঙ্গে চালিয়ে নিতে স্বাস্থ্য এবং জনজীবন ব্যবস্থাপনার বিশাল চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে অনেক সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে তা সফলভাবে বাস্তবায়নের সাক্ষর রেখে তিনি বিশ্ব নেতাদের সারিতে বিচক্ষণ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আশা করা যায় তার মেধা এবং পরিশ্রমে এবারও উৎরে যাবেন। আর তা যদি হয় তাহলে বিশ্বের দরবারে আরও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবেন ঈর্ষণীয় সাফল্যের সঙ্গে।
একইসঙ্গে বিশ্ববাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছে করোনা প্রতিষেধকের। ব্রিটিশ ডাক্তার এডওয়ার্ড জেনারের ১৭৯০ সালে আবিস্কার করা গুটি বসন্তের টিকা দক্ষিণ এশিয়ার লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা হয়েছিল এবং জলাতঙ্ক ও অ্যান্থ্রাক্সের টিকা আবিস্কার করে অনেক মানুষ ও পশুর জীবন বাঁচিয়েছেন লু্ই পাস্তুর। আর লুই পাস্তুরের পথ ধরেই কলেরা ও প্লেগের টিকা আবিস্কার করেন ওয়াল্ডিমার হাভকিন। ঠিক সেভাবেই করোনা থেকে মুক্তির জন্য কবি গুরু রবী ঠাকুরের সেই জুতা আবিস্কারের কবিতার নায়কের মতো একজন মুচি দরকার। যার প্রতিষেধক আবিস্কারে করোনা থেকে মুক্তি পাবে বিশ্ব।
লেখক: চেয়ারম্যান, দেশবন্ধু গ্রুপ