সংকটেও উৎপাদন জোরদার দেশবন্ধু টেক্সটাইলের

শতভাগ পরিপালন হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি

সংকটেও উৎপাদন জোরদার দেশবন্ধু টেক্সটাইলের

# রপ্তানির চেইন ঠিক রাখতে গ্যাসের ব্যবস্থা ও রাস্তা মেরামতের জোরালো দাবি

জাকির হুসাইন
Published : Wednesday, 8 July, 2020

সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে চলেছে করোনা ভাইরাস; যার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি ধুঁকছে। বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতিও মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। সেখান থেকে টেনে তুলতে এমনকি সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে সর্বদা প্রস্তুত দেশ ও জনগণের বন্ধু দেশবন্ধু গ্রুপ। করোনার ভয়কে জয় করে শুরু থেকেই স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে গ্রুপের সব ধরনের কার্যক্রম। এর মধ্যে শতভাগ রপ্তানি করছে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলের উৎপাদিত পোশাক। দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে ও কর্মসংস্থান ঠিক রাখতে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বর্তমানে উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও জোরদার করেছে উত্তরবঙ্গে সবচেয়ে বড় পোশাক কারখানা দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিল।

জানা গেছে, বেকারত্ব ঘুচিয়ে বিনিয়োগ ও উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে দেশবন্ধু গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস্ গত বছরের ৪ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ হাতে গড়া উত্তরা ইপিজেডের অভ্যন্তরে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস্ লিমিটেডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
সেই থেকেই চলছে স্বমহিমায় উৎপাদন কার্যক্রম। বর্তমানে যেখানে বিশ্বের উৎপাদন গতি থামিয়ে দিয়েছে নভেল করোনা ভাইরাস; তখনো চলছে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলের উৎপাদন। যখন প্রতিনিয়ত চাকরি হারানোর খবর গণমাধ্যমে আসছে, সেই সময়ও দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার নির্দেশে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলের একজন শ্রমিকেরও চাকরি যায়নি; বরং সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে এক হাজার ২০০ শ্রমিক কাজ করছেন।
দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলের প্রধান কারখানা পরামর্শক কাজী মোকসুদেন নবী আবু নাসের জানান, বৈশ্বিক মহামারি করোনায় কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়নি; বরং দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি সব আইন-কানুন পরিপালন করেই উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সকালে কারখানা প্রাঙ্গণে প্রথমে কোরআন তেলওয়াত ও পরে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে কাজের সূচনা করা হয়। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে শুরু হয় কাজ। দুপুরে নামাজ ও খাবারের বিরতিতে পরিপালন হয় স্বাস্থ্যবিধি। একসঙ্গে পাশাপাশি বসে নয়, লাইন করে সবাই দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রেও নিদিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ও সারিবদ্ধভাবে চলাচল করেন শ্রমিক-কর্মচারীরা; যা বেপজাসহ স্থানীয়দের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
তিনি বলেন, দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলের ব্যবহৃত সব মেশিনারিজ ইউরোপ ও জামার্নির। কারখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে দারুণ সফলতা এসেছে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলে। গত জুন মাসে ব্রাজিল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (ইউএসএ) কাপড়ের বড় চালান পাঠানো হয়েছে। কয়েকটি দেশের অর্ডার পাইপ লাইনে রয়েছে। যেগুলো চলতি মাসে পাঠানো হবে। এখানকার উৎপাদিত পণ্য বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ কারণে বিদেশি বায়াররা প্রায়ই পরিদর্শনে আসতেন কারখানায়। উৎপাদন প্রক্রিয়া ও পণ্যের মান দেখে স্পট (তাৎক্ষণিক) অর্ডার করেন অনেকেই। আবার অনেকেই দেশে ফিরে অনলাইনে অর্ডার করেন।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে কোম্পানির হাতে পাঁচ লাখ পিস প্যান্টের অর্ডার আছে; যার বেশিরভাগ ব্রাজিল, ইউএসএ, ইউকে ও ডেনমার্কের। তবে করোনার কারণে বায়াররা আগের মতো পরিদর্শনে আসছেন না। সবকিছু এখন অনলাইনে চলছে। এ কারণে অর্ডার কিছুটা কমেছে। তাছাড়া কিছু অর্ডার বাতিলও হয়েছে।
কাজী মোকসুদেন নবী আবু নাসের বলেন, দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলে মোট ৫৬টি লাইনের মধ্যে বর্তমানে ১৭টি লাইনে পুরোদমে উৎপাদন চলছে। চারটি লাইন উৎপাদনের অপেক্ষায়। আগামী ঈদের পর মোট ২৮টি লাইনে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হবে। বর্তমানে ২১টি লাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন ১৫ হাজার পিস পাঁচ পকেট ডেনিম প্যান্ট উৎপাদন হচ্ছে। এ ছাড়া তিনটি লাইনে শার্ট উৎপাদন করছে।
তিনি আরও বলেন, কারখানায় প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ গজ কাপড় লাগে। এখানে ব্যবহৃত কাঁচামাল বেশিরভাগই দেশের অভ্যন্তর থেকেই নেওয়া হয়। তবে কিছু কিছু ভারত ও চীন থেকে আমদানি করা হয়। আগামী ডিসেম্বরে ওয়াশিং ইউনিটে মেশিন বসানো হবে। এটি চালু হলে প্রতিদিন ৫০ হাজার প্যান্ট ওয়াশ করা যাবে।

দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলের প্রকল্প সমন্বয়ক ছোয়াদ সালেহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে যে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন; যা বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উত্তরবঙ্গ আজ আর পিছিয়ে নেই। উত্তরবঙ্গবাসী আর পিছিয়ে থাকতেও চায় না। তবে সত্যি বলতে কী উত্তরবঙ্গে উল্লেখ্যযোগ্য তেমন গামের্ন্টস নেই; যা আছে তা হাতেগোনা। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় উত্তরবঙ্গে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলের যাত্রা শুরু হয়। এটিই বর্তমানে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় পোশাক কারখানা। এখানে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দেশবন্ধু গ্রুপ। এ কাজকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিতে মোটা অঙ্কের টাকার প্রয়োজন। করোনাকালীন সরকারি সহায়তা বেশ উপকারে এসেছে। তবে সহজ শর্তে ব্যাংক লোন পেলে উত্তরা ইপিজেডের এ কারখানাকে বিশ্বের অন্যতম কারখানায় রূপান্তর করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, শুধু দেশবন্ধু টেক্সটাইল নয়, সমগ্র উত্তরা ইপিজেডের কাজ ত্বরান্বিত করতে ও রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করতে উত্তরবঙ্গের অবকঠামো দ্রুত সংস্কার ও উন্নয়ন দরকার। বিশেষ করে সৈয়দপুর-নীলফামারীর মধ্যবর্তী কাজীর হাটের রাস্তার একেবারেই বেহাল দশা। এতে রপ্তানি কাজে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, উত্তরা ইপিজেডকেন্দ্রিক সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাই উল্লিখিত রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে এ এলাকায় গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করারও দাবি জানান তিনি।
কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিল শতভাগ রপ্তানিবান্ধব প্রতিষ্ঠান। যাতে অ্যাম্ব্র্রয়ডারি ডেনিম গার্মেন্টস, ওয়াশিং ইউনিট এবং প্রিন্ট সুবিধা রয়েছে। প্রতি বছর এখান থেকে এক কোটি ৭৪ লাখ ৭২ হাজার পিস ডেনিম/চিনো/কার্গো প্যান্ট, আউটওয়্যার, ফেন্সি অ্যাপারেলস উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তবে বর্তমানে সবক’টি লাইন চালু না হওয়ায় বার্ষিক উৎপাদন হচ্ছে ৬০ লাখ পিস। দেশবন্ধুর এ টেক্সটাইলস (ডিটিএএল)-এ ১৬টি আলাদা ফ্লোর ইউনিট করা হয়েছে; যার আয়তন ৭১ হাজার ৭৫০ বর্গফুট এবং সর্বমোট আয়তন দুই লাখ ৭১ হাজার ২৭২ বর্গফুট। এতে ইটিপি প্লান্ট ও ওয়াশিং প্লান্ট সুবিধাও বাস্তবায়ন হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের ২০২টি প্লটের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৫০টিতে বিনিয়োগ করেছেন শিল্পপতিরা। দেশীয় শিল্পপতি ছাড়াও হংকং, চীন ও ভারতীয় কিছু প্রতিষ্ঠান এখানে বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া গার্মেন্টস এক্সেসরিজ, ইলেক্টনিক্স, চশমা, পরচুলা, কফিন, চামড়ার ব্যাগ, জুতাসহ অনেক দ্রব্য আমদানি-রপ্তানির জন্য বিনিয়োগ করেছে কিছু প্রতিষ্ঠান। এনএমএস।

 

source: https://www.ajkalerkhobor.com/details.php?id=80734